মানিকগঞ্জে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় বালু লুট, প্রশাসন নীরব; আতঙ্কে দুই পাড়ের মানুষ


নান্নু মিয়া
, স্টাফ রিপোর্টার:

মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় চলছে বালুর নামে ভয়াবহ লুটপাট। কোটি কোটি টাকার ইজারার আড়ালে প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক চক্র নদী থেকে বালু উত্তোলন করে মুনাফার পাহাড় গড়ছে। অথচ এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া সাধারণ মানুষকে করে তুলেছে চরম অসহায়।

তথ্য অনুযায়ী, ঘিওরের তরা বালু মহল ৭ কোটি ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকায় এবং সদর উপজেলার চামটা-পৌলী-বিল বরিয়াল বালু মহল ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ইজারা নেন মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইজারাকৃত নির্দিষ্ট স্থান ছেড়ে বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লোকিববাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

ইজারাদার কামাল হোসেন মানিকগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাছুদ পারভেজ জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা। স্থানীয়দের অভিযোগ—এই রাজনৈতিক পরিচয়ের বলেই প্রশাসনের চোখ রঙিন, আর ভুক্তভোগীরা নির্বাক। তারা বছরের পর বছর নদী শাসনের নামে নদী ধ্বংস করে কোটি কোটি টাকা লুট করছে।

দুই পাড়ে বিপর্যয়:

অতিরিক্ত বালু তোলার কারণে নদীর গতি পরিবর্তন হচ্ছে। চরাঞ্চল একপাশে ভাঙছে, অন্যপাশে গ্রাম গিলে খাচ্ছে নদী। বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও মানুষের জীবিকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। অনেক গ্রামবাসী ইতিমধ্যেই ঘরবাড়ি হারিয়ে ভিটেছাড়া হয়েছেন।

প্রশাসনের নীরবতা রহস্যজনক:

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা অবশ্য বলেছেন,

বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বলে দিচ্ছি এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—বছরের পর বছর এভাবে প্রকাশ্যে নদী লুট হচ্ছে, অথচ প্রশাসন এতদিন চুপ করে ছিল কেন?
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-কে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণেই এই নীরবতা।

এলাকাবাসী আরও জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়। হুমকি-ধমকি দিয়ে সবাইকে ভয় দেখানো হয় যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে। ফলে গ্রামবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

এলাকাবাসীর একটাই দাবি—অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে

মানুষের অভিযোগ স্পষ্ট—ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দলের নেতাদের ছত্রছায়া ছাড়া এভাবে প্রকাশ্যে নদী লুট সম্ভব নয়। রাজনীতির প্রভাব আর অর্থের জোরে নদী আজ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, আর ভুক্তভোগীরা দাঁড়িয়ে আছেন ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের সামনে।

 

Post a Comment

0 Comments